যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে মাঝ আকাশে মার্কিন সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারের সঙ্গে একটি যাত্রীবাহী বিমানের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় বিমানের সব আরোহী নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। গত বুধবার রাত ৯টার দিকে (বাংলাদেশ সময় গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা) একটি হেলিকপ্টারের সঙ্গে একটি যাত্রীবাহী বিমানের সংঘর্ষ হয়। পরে বিমান ও হেলিকপ্টারটি হিমশীতল পটোম্যাক নদীতে বিধ্বস্ত হয়। তবে মাঝ-আকাশে বিপর্যয়কর এই দুর্ঘটনায় বিমানটি টুকরো টুকরো হলেও মার্কিন সামরিক বাহিনীর ওই হেলিকপ্টার রয়েছে অনেকটাই অক্ষত।
এ ঘটনায় জোর উদ্ধার অভিযান চলছে। তবে রাতের বেলা ও প্রচণ্ড ঠান্ডার কারণে উদ্ধার তৎপরতায় বেগ পেতে হয়। এর মধ্যেও উদ্ধারকারীরা ১৯ জনের লাশ উদ্ধার করেছেন। তবে জীবিত কাউকে উদ্ধার করা যায়নি বলে পুলিশের বরাতে জানিয়েছে সিবিএস নিউজ। ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়ার (ডিসি) ফায়ার অ্যান্ড ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্টের প্রধান জন ডনেলি দুর্ঘটনায় যাত্রী কিংবা ক্রুদের কারও জীবিত থাকার তথ্য জানাতে পারেননি। এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে জন ডনেলি বলেন, ‘দুর্ঘটনার খবর পেয়ে উদ্ধারকর্মীরা দ্রুতই ঘটনাস্থলে পৌঁছান। পরে নদীতে বিধ্বস্ত উড়োজাহাজটির খোঁজ পাওয়া যায়।’ হতাহতের ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি এখনও স্পষ্ট নয় যে, সেখানে কোনো জীবিত ব্যক্তি আছেন কি না। তবে উদ্ধারকর্মীরা হতাহতদের সন্ধানে কাজ করছেন। ডনেলি আরও বলেন, উদ্ধারকর্মীদের প্রথম ও প্রধান কাজই হলো বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা। তবে পাশাপাশি তারা ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে উড়োজাহাজটির বিধ্বস্তের প্রমাণ সংরক্ষণের কাজও করবেন। তিনি বলেন, আমরা পরের দিন সকালে আলো ফুটলে আবার উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করবো। দুর্ঘটনা নিয়ে কথা বলেছেন ওয়াশিংটন ডিসির মেয়র মুরিয়েল বাউসার। তিনি নিশ্চিত করেছেন, হেলিকপ্টার ও বিমান উভয় পোটোম্যাক নদীতে গিয়ে পড়েছে। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, যাত্রীবাহী বিমানটিতে ৬৪ জন এবং সামরিক হেলিকপ্টারটিতে তিনজন যাত্রী ছিলেন। বাউসার বলেন, আমাদের প্রধান লক্ষ্য মানুষকে উদ্ধার করা এবং আমাদের সমস্ত কর্মীরা সেদিকেই মনোনিবেশ করছেন। তিনি উদ্ধার প্রচেষ্টা বা তদন্ত সম্পর্কে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। তবে তিনি বলেছেন, ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড তদন্তের নেতৃত্ব দিচ্ছে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইও এই তদন্তে সহযোগিতা করছে।
মার্কিন ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) জানিয়েছে, দুর্ঘটনার পর ‘জরুরি অবস্থার’ কারণে রিগ্যান ওয়াশিংটন ন্যাশনাল এয়ারপোর্ট বন্ধ করে দেয়া হয়। এদিকে মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যাত্রীবাহী বিমানের সঙ্গে সংঘর্ষ হওয়া হেলিকপ্টারটি মার্কিন সেনাবাহিনীর একটি ব্ল্যাকহক হেলিকপ্টার। হেলিকপ্টারটি সিকোরস্কি ইউএইচ-৬০ মডেলের। একজন মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার বরাতে সিএনএন জানিয়েছে, ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারটিতে তিনজন ক্রু ছিলেন এবং এতে কোনো ভিআইপি ছিলেন না। ওয়াশিংটন ডিসি এলাকায় ভ্রমণের জন্য ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা প্রায়ই ব্ল্যাক হক ব্যবহার করেন। আর বিধ্বস্ত বিমানটি আমেরিকান পিএসএ এয়ারলাইন্সের। বোমবার্ডিয়ান সিআরজে৭০০ মডেলের বিমানটি গত বুধবার সকালে কানসাসের উইচিটা থেকে ওয়াশিংটন ডিসির উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। এ ঘটনায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ট্রাম্প বলেছেন, রিগ্যান ন্যাশনাল বিমানবন্দরের কাছে বিমান ও হেলিকপ্টারের সংঘর্ষের বিষয়ে তাকে ‘সম্পূর্ণ অবহিত’ করা হয়েছে। তিনি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।
এদিকে মাঝ আকাশে হেলিকপ্টার ও যাত্রীবাহী বিমানের এই সংঘর্ষের ঘটনা অনেকেই প্রত্যক্ষ করেছেন। যাদের মধ্যে কেউ কেউ গণমাধ্যমে তাদের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করেছেন। অ্যারি শুলম্যান নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, তিনি একটা আলোর ঝলকানি দেখেন যা অনেকটা বড় আকারের রোমান মোমবাতির মতো দেখতে। শুলম্যান এনবিসি নিউজকে বলেন, তিনি জর্জ ওয়াশিংটন পার্কওয়ে ধরে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন। যেখানে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে সেই রিগ্যান ওয়াশিংটন ন্যাশনাল বিমানবন্দরের পাশ দিয়েই গেছে রাস্তাটি। এই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় প্রায়ই বিমানের ওঠানামা দেখেন তিনি। শুলম্যান বলেন, দেখে সবকিছু স্বাভাবিকই মনে হচ্ছিল। বিমানটি ঠিকমতো নেমে আসছিল, কোনো সমস্যা ছিল না। শুলম্যান একটা মোড় নেন এবং কিছুক্ষণ পরই পেছনে ফিরে তাকান। তিনি বলেন, আমি পেছনে ফিরেই দেখি কোথাও একটা সমস্যা হয়েছে। বিমানটিকে দেখে মনে হল এটা ডান দিকে বেঁকে যাচ্ছে। সম্ভবত ৯০ ডিগ্রি। আমি বিমানের নিচের অংশ দেখতে পাচ্ছিলাম। তখন বাইরে খুবই অন্ধকার। তাই বিমানের নিচের অংশ ভালোমতো দেখতে পাওয়ার কথা না। এ প্রত্যক্ষদর্শী আরও বলেন, বিমানর নিচের অংশে উজ্জ্বল হলুদ আলো দেখা যাচ্ছিল এবং এর নিচ থেকে স্ফুলিঙ্গ বেরিয়ে আসছিল। এটা আমার কাছে রোমান মোমবাতির মতো দেখাল। একটা আগুনের স্ফুলিঙ্গ বিমানর নাকের দিক থেকে লেজের দিকে ছড়িয়ে পড়ছিল। শুলম্যান এরপর রাস্তায় দিকে ফিরে তাকান। তবে তিনি কোনো বিস্ফোরণের শব্দ বা বড় কোনো আওয়াজ শুনতে পাননি। বিমান বিস্ফোরণ হয়েছে কিনা তা বোঝার চেষ্টা করছিলেন তিনি। কিন্তু কোনো আগুন দেখা যায়নি। শুলম্যান বলেন, আমি আগুনের গোলা দেখার জন্য পেছনে ফিরে তাকাই। কিছু বিধ্বস্ত হয়েছে কিনা সেটা খুঁজতে থাকি। কিন্তু আমি কিছুই দেখতে পাইনি। শুলম্যান আরও বলেন, প্রথমে মনে হয়েছিল দৃষ্টিভ্রম হয়েছে। যদি সেখানে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা ঘটে থাকে, কেন আমি পরে কিছুই দেখতে পেলাম না? তবে ঘটনা যে ঘটেছে তা বুঝতে পারেন পরক্ষণেই। জরুরি উদ্ধারকারীদের প্রথম দলটিকে তিনি দেখতে পান। এছাড়া দুই স্থানীয় বাসিন্দা গণমাধ্যমকে জানান, কীভাবে পোটোম্যাক নদীতে বিমান বিধ্বস্ত হয়েছিল তা তারা দেখেছিলেন। জিমি মাজেও নামে একজন বলেন, তিনি আকাশে ‘আগুনের সাদা শিখার’ মতো দেখতে পেয়েছিলেন। তার কথায়, ‘আমরা ভেবেছিলাম কেউ তারা ছুঁড়ছে।’ তিনি আরও বলেন যে জরুরি পরিষেবাগুলো ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগে পর্যন্ত তিনি বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি ভাবেননি।

যুক্তরাষ্ট্রে বিমান-হেলিকপ্টার সংঘর্ষ বিমানের সব আরোহী নিহত
- আপলোড সময় : ৩১-০১-২০২৫ ০৭:৪৬:৩৫ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ৩১-০১-২০২৫ ০৭:৪৬:৩৫ অপরাহ্ন


নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ